বই: টাইম ম্যানেজমেন্ট

টাইম ম্যানেজমেন্ট বইটি পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে গেছি। এতেই বুঝা যায় অলসতা কোন পর্যায়ের!

ঘুম থেকে উঠার এক ঘণ্টা আগ থেকে অ্যালার্ম বাজে। বউয়ের ক্যানক্যানানী। অফিসের বসদের ঘ্যানঘ্যানানী। গায়ের কাঁথা নিয়ে টানাটানি এসব আর ভালো লাগে না। এই অলস জীবন নিয়ে আজ জীবন অতিষ্ঠ। জীবন থেকে পালিয়ে অন্য কোন অলস পৃথিবীতে যে যাব সে ভিসা পর্যন্ত অলসতার জন্য নেয়া হয়নি!

রোজ রোজ টয়লেটে বসে ঝিমানো, কলের পানি ছেড়ে দাঁত ব্রাশ করতে করতে পাছা চুলকানো, এমন জীবন থেকে বের হতে হবে। আমাকে স্মার্ট, সৃজনশীল এবং একজন দক্ষ সময় ব্যবস্থাপক হতে হবে। এক কথায় আমার সময় যাবে মেপে মেপে। আমি চলব ‘কথা কম কাজ বেশি’ নীতিতে।

তো একদিন হঠাৎ গভীর রাতে ঘুম থেকে উঠে লুঙ্গিতে কাছা মেরে পরিকল্পনা করতে বসলাম। আজই জীবনের সব কাজ করে ফেলবো। কাল থেকে অন্য এক পৃথিবী। এই অন্য এক আমি। তারপর দেখা গেলো এতই কঠিন কঠিন পরিকল্পনা করা হলো ভাবতেই ক্লান্তিতে আবার ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতের কোন ঘটনাই আর মনে নেই। পরিকল্পনার ওই কাগজের অন্য পৃষ্ঠায় বাজারের তালিকা করে বাজারে গেলাম। ৯০ টাকা কেজির পেঁয়াজ কিনলাম। খেলাম-দেলাম। বসে থাকলাম। ঘুমালাম। তারপর সেই আগের অলস আমি।

এখন আসি আসল কথায়।

আসলে আমরা দুই ঘণ্টা ধরে পরিকল্পনা করতে রাজি তবে আধা ঘণ্টা কাজ করতে রাজি না। পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা পরিকল্পনা করে থাকি তারপর ওই পরিকল্পনার ছবি তুলে ফেসবুকে দিই, আর কাজ করি না। এ হলাম আমরা, অলসরা..!

আসল সমস্যাটা এখানে, কাজ করা, না করা নিয়ে। আজ করব কাল করব এই শুরু করা নিয়ে।

টাইম ম্যানেজমেন্ট বইটি যতবারই পড়তে বসেছি ততবারই ঘুমঘুম লেগেছে। কারণ, আমার কথা হলো এই বেটা কি কয়? এসব তো আমি আগ থেকেই জানি। বইটি পড়ার সময় নিজেকে খুব পণ্ডিত পণ্ডিত মনে হচ্ছিলো। ভাবখানা এমন এই রকম দু’চারটা বই আমিও লিখতে পারি। ব্যাপারটি হলো, সময় ব্যবস্থাপনা ব্যাপারটি বুঝা খুব সহজ তবে মেনে চলা কঠিন।

যেমন আমার কথাই ধরেন, বেশি ফেসবুকিং না করে একটু আধটু পড়াশুনা করলে জীবনে উন্নতি হত। ফজরের পর না ঘুমিয়ে ব্যায়াম করলে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকত।
একজন ছাত্র বুঝে আমি পড়লে পাশ করবো আবার না পড়লে ফেল করবো। কিন্তু যে ছাত্র বুঝে, না পড়লে নিশ্চিত ফেল করবো সে কি নিজের অলসতা ঝেড়ে ফেলে পড়তে বসে নাকি উল্টো পড়তে ভালা লাগে না বলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়।
পড়াশুনার সময় কত আজাইরা কথাই না মনে পড়ে।

আসলে, কোন বই পড়ে ১০০% ফলো করা সম্ভব না। আর এটার দরকারও নেই। আবার একটা বই পড়ে যে জীবনের আমূল পরিবর্তন হয়ে যাবে এমনটাও নয়। তবে বই পড়ে যেটা পাওয়া যায় সেটা হলো কিছু অনুপ্রেরণা, কয়েকটা উপদেশ। কয়েকটা অভ্যাস বদলের চ্যালেঞ্জ। প্রতিটা বই পড়ার সময় এই একটু, এই একটা করেও যদি নিজেকে পরিবর্তন করা যায় সেটাই আসল।

এবার আমার নিজের একটি পরিবর্তনের কথা বলি। খুবই সামান্য পরিবর্তন।

সেটা হলো ট্রাভেলিং এর সময় বই পড়া। ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখা। যেমন, আমার চট্টগ্রাম যেতে ৫ ঘণ্টা লাগে। আগে প্রথমেই ট্রেনে উঠে ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস মারতাম! এরপর ওই স্ট্যাটাসের কয়টা লাইক পড়লো, কে কে কমেন্ট করলো এসব চেক করতাম। বন্ধুদের ফোন করে গালিগালাজ করতাম। এই বেটা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিছি, কমেন্ট মার!

আর এখন চেষ্টা করি প্রথম এক ঘণ্টা বই পড়ার। তারপর এক ঘণ্টার মত ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখে এরপর ফেসবুক এবং অন্যান্য আউল-ফাউল কাজকর্ম করার।

সময় অনুযায়ী চলা জীবনের বড় একটা চ্যালেঞ্জ। তো চলেন সময় কাজে লাগাই। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করি। একটু আধটু অলসতা থাকবে। জীবনের জন্য আড্ডা, বন্ধু, ঘোরাফেরা সব দরকার আছে। সাথে সাথে কিছু সময় কাজে লাগানোরও দরকার আছে।

মাঝে মাঝে সময় কাজে লাগালেই তো পরবর্তী আড্ডাতে মজা লাগবে। ঘোরাফেরাই চিয়ার্স ফীল হবে..!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Recent Post

শুভ জন্মদিন ২০২২

আজ আমার তেত্রিশ মতান্তরে পঁয়ত্রিশতম শুভ জন্মদিন! (বয়সে করোনাকালিন হিসেব বাদ দেয়া হয়েছে) ছবিটি আনুমানিক ২০ বছর আগের হারিকেন জমানার। ছত্রিশ ফিল্মের কোডাক ক্যামেরার। মেঘে মেঘে বয়স তো আর কম হলো না। সেই ১৫ টাকা সের চাল সময়কার ছেলে আমি। ৪০ টাকা নিয়ে বাজারে যেতাম। এর মধ্যে মাছ-তরকারি, মুদি সদায় সহ দুই টাকা বাঁচিয়ে .....

বই: প্রোডাক্টিভ মুসলিম

বইটি পড়ে কিছু ব্যাপারে আচার্য হয়েছি। বইটি হাতে নিয়ে পড়ার আগে মনে করেছিলাম, এর ভিতরে লেখা থাকবে শুধু কাজ আর কাজ। কিসের ঘুম, কিসের বিশ্রাম আর কিসের অবসর। হয়তো বলা থাকবে, এই দুনিয়াতে কি শুধু ঘুমাতে আসছেন। শুধু কাজ করেন আর অন্য কিছু নয়। পরবর্তীতে ঘুমের উপর চ্যাপ্টার পড়ে আরও বেশি আচার্য হয়েছি যে, .....

বই: ইন দ্য হ্যান্ড অব তা-লে-বা-ন

১১ সেপ্টেম্বর, ২০০১। মঙ্গলবার। নিউইয়র্ক-বাসীর সকালটা শুরু হয় অন্যান্য দিনের মত! সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলা নিউইয়র্কের লোকজন খুব সকালে উঠে যার যার অফিস শুরু করেছে। প্রতিদিনকার সকালের মত হয়তো কেউ কেউ চা-কপি দিয়ে মাত্র অফিস ডেক্সে ওইদিনের মত নিজেকে সেট করে নিচ্ছে। পৃথিবীকে নাড়া দিতে যাচ্ছে এমন কোন ঘটনা ঘটতে চলেছে তখনও এই .....

বই: ফজর আর করব না কাজা!

আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম! মাত্র ফজরের আজান হয়েছে। সামনের বাসার আঙ্কেলের বড় গেটের তালা খোলার খটখট আওয়াজ। তারপর আমার মোবাইলের এক নাম্বার এলার্ম ভেজে উঠলো। একরাশ বিরক্তিসহ এলার্ম বন্ধ করলাম। এই আলতো ঘুমের এমন ঝনঝন তালা খোলার শব্দ আর এলার্মের এমন ভিট-ঘুটে আওয়াজ সত্যিই বিরক্তিকর ছিলো। তারপর কোন রকম উঠে দায়সারা ভাবে নামাজ ঘরে .....

বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ রিভিউ: এ আমি কি দেখলাম?

অফিস থেকে মনে হয় একটু তাড়াহুড়া করেই বের হয়েছি। আজকে বাংলাদেশের চির প্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ার সাথে খেলা। কয়দিন আগেও এই অস্ট্রেলিয়াকে মিরপুরের মাঠে আমরা কচুকাটা করেছি। সেই হিসেব মতে আজ একটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই উপভোগ করবো। টানটান উত্তেজনা থাকবে। বাংলাদেশ হাড় কাঁপানো ব্যাটিং করবে। মাঠ কাঁপানো ফিল্ডিং করবে। টানটান করে বাউন্ডারি হাঁকাবে। দর্শক সাড়ি থেকে বাংলাদেশ! .....

নাফাখুম জলপ্রপাত – নেটওয়ার্কের বাইরে একদিন

আজকে যাবো। কালকে যাবো। এই বর্ষায় যাবো। এমন করতে করতে এক ট্যুরের প্ল্যান চলে প্রায় দুই বছর ধরে। এর মধ্যে করোনা। লকডাউন। শাটডাউন। মাস্ক। স্যানিটাইজার ইত্যাদি ইত্যাদি পৃথিবীতে নতুন করে আগমন করেছে। অন্যদিকে নাই হয়ে গেছে অনেক পরিচিত মানুষ, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-অনাত্মীয়। প্রতি বছর একটা জংলী ট্যুর দেয়ার ইচ্ছে থাকে। বড়সড় একটু গ্রুপ করে কোন .....

All Post